সিনিয়ার সিটিজেন

সিনিয়ার সিটিজেন
-শচীদুলাল পাল

 

দৈনন্দিন জীবন বড়ো একঘেয়ে ।ভাবি কবে ষাট বছর পূর্ণ হবে।অবসর নেব। হেসে খেলে জীবন কাটাবো।সিনিয়র সিটিজেন ক্লাবে পা দেব। নামটাও বেশ ভালো ‘সিনিয়ার সিটিজেন’। ভারিক্কি একটা ইমেজ।বেশ আরামে থাকবো। পায়ের উপর পা তুলে , চোখ বুজে মেটাবো মনের আশা।বাসে ট্রেনে রাস্তায় পাবলিক প্লেসে বাড়ীতে যেথা সেথা দাঁড়াবো তাদের মাঝে তারা সমীহ করে সসম্মানে আসন ছেড়ে দেবে।আরও কত আশা মনে।অবশেষে একদিন ষাট পার হলাম। হয়ে গেলাম গ্লামারার্স সিনিয়র সিটিজেন।
কিন্তু একি হলো?যেসব আমার কল্পনাতে ছিল বাস্তব কিন্তু অন্য কথা বলে।উল্টো হতে লাগল।
প্রথমে ব্যাঙ্ক ঘোষনা করল অবসর। আমি হয়ে গেলাম পর।
নিজেকে আমি উজাড় করে দিয়েছিলাম পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে,সামাজিকতায়।
চল্লিশ বছরে ভেবেছিলাম শক্ত হয়ে গেছে গাঁট।কিন্তু অবসর ঘোষনার সাথে সাথে সব গুঁড়িয়ে গেলো।রাস্তাঘাটে কনিষ্ঠরা সম্মানের বদলে অবজ্ঞার চোখে দেখতে শুরু করলো।মনে হয় ওরা সিনিয়র দের সম্মানের বদলে অবজ্ঞা বেশী করে করে।মনে করে অপদার্থ অচল সমাজের এক বস্তু।বাসে ট্রেনে সিনিয়র সিটিজেন লেখা দেখে যদি দাঁড়াই, আমাকে দেখে ঘুমিয়ে পড়বে। যদি কেউ জেগে থাকে বলবে আপনার চেয়েও কেউ যদি বুড়ো আসে তাহলে ছাড়বো সিট।
তর্ক করে কী হবে? তার চেয়ে ক্রোধটা দমন করে রাখি।
বাড়ীতে গিন্নির কথাও গেছে পালটে।বলে “সারাদিন তুমি করোটা কী?বাড়ীর কাজগুলোতো সব নিজের হাতে করতে পারো।এতদিন আমি শীত গ্রীষ্ম বর্ষা সংসারের ঘানিটা টানলাম। এখন যখন তোমার কাছে কাজকর্ম নেই তখন ঝাড়পোঁছ রান্নাবান্না টা তো করতে পারো।শরীরটা ফিট থাকবে মনটা সতেজ থাকবে সময়টাও কাটবে।আমি বরঞ্চ দুবেলা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াই।তবে দেখো দুবেলা যেন খেতে পাই! এতদিন ত ঘুরেই বেড়ালে এবার নাহয় আমিই ঘুরে বেড়াই।”
আমই বললাম ” আমি ত এতদিন গাধার মত খেটেছি, টাকা জুগিয়েছি, বাইয়ের যতকাজ সবই তো করেছি, শারীরিক মানসিক চাপ তো আমিই সামলেছি।”
কিন্তু বলে কী হবে?
ছেলে মেয়েরাও কম যায়না। বলল”বুড়ো হয়েছো চুপচাপ থাকো,হাইটেক যুগ।তোমার পুরানো চিন্তাধারা এ যুগে অচল।আমাদের সাথে চলতে যদি না পারো ঠাকুরঘরে গিয়ে হরি নাম করো।”
হে ভগবান। আজ নাহয় অবসর নিয়েছি। কিন্তু কর্মজীবনে? নামেই ছিল দশটা পাঁচটা। অনেকের কাজ সেরে উঠতে উঠতে বেরতে বেরতে হয়ে যেতো নটা দশটা। কাজের মেয়ে সেও বুঝে গেছে বাবু বুড়ো হয়ে গেছে। বাবুর এ বাড়ীতে কথার মর্যাদা কম। কোনো কিছু চাইলে বলে “মার কাজটা আগে তোমারটা পরে”।
তখন ভাবি পুরানো চিন্তাগুলো সব ভুলে নতুনদের সাথে মিশে যাবো নতুনদের সাথে মিলে মিশে জগৎটাকে দেখব নতুন করে তাদের লেবেলে পৌঁছে। গতি শক্তিতে তারা জিতবেই এটা মেনে নিলাম একদিন বললাম “তোমাদের সাথে আমাকেও নিও গতি শক্তিতে এগিয়ে থাকলেও অভিজ্ঞতার ঝুলি তো মিছে নয়!
রামায়ণের যুগে সেই কাঠবিড়ালি যার ক্ষুদ্র অবদানে রাম সেতু বন্ধন করেছিল,তোমাদের গতিশক্তি আমার অভিজ্ঞতা মিলে একসাথে সময়ের মুলস্রোতে ভেসে গড়ি সমাজ। তোমরা আমরা গড়ি এক ভালবাসার সমাজ। “

Loading

Leave A Comment